মৌনের জাদু এবং আপনার লক্ষ্য
'মৌনতাই সবচেয়ে বড় ভাষণ। যতটা সম্ভব কম কথা বলুন। যদি একটা কথাতেই কাজ হয়ে যায় তাহলে দুটো কথা বলবেন না। এটা লক্ষ্য পূরণের সঠিক মন্ত্র।' -মহাত্মা গান্ধি
এখন আপনি লক্ষ্য বানানোর প্রয়োজন কতটা তা বুঝে গেছেন, এবার আমরা পরবর্তি পর্যায় নিয়ে আলোচনা করব। যা আমাদের লক্ষ্য গুলিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। আপনারা নিশ্চই বুঝেগেছেন যে জীবনের লক্ষ্যের দিকে নজর রাখলে তবেই আমাদের মানব জীবন সার্থক হয়ে উঠবে। নিজের লক্ষ্যরে ব্যাপারে আরোও অগ্রসর হতে হলে মৌন থাকাটা খুবই জরুরি। যদি লক্ষ্য লেখা ওতা সাজানোর বিষয়টি আপনার কাছে কঠিন বলে মনে হয় তাহলে চব্বিশ ঘন্টা মৌন থাকুন।
মনে রাখবেন যে আপনি নিজের জীবনের কাঠামো গড়ে তোলার জন্য মৌন থাকছেন, তারপর সম্পূর্ণ জীবনের লক্ষ্য পূরণের জন্যই আপনাকে মৌন থাকতে হবে। আপনি যদি এই ভাবে চলতে পারেন তাহলে চব্বিশ ঘন্টার মৌনতাই আপনার জীবনে সফলতার বার্তা এনে দেবে। এরপর আপনার জীবন এমন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করবে যে আপনি ইচ্ছা করলেও বসে থাকতে পারবেন না। আমি মন্ত্র তন্ত্রে বিশ্বাস করিনা, তবুও জাদুর কথা বলছি। এটা মৌনতার জাদু যা আমি নিজে অনুভব করেছি এবং বিশ্বাস করি যে আমার পাঠকরাও তা অনুভব করতে পারবে, তার ফলে তারা আনন্দও লাভ করবে।
আমাদের প্রাচিন শাস্ত্র বলে দেয় যে মৌন থাকতে পারলে কতটা লাভবান হওয়া জায়, কিন্তু যদি এর প্রকৃত লাভ পেতে চান এবং এর জাদু অনুভব করতে চান তা হলে চব্বিশ মৌন থাকার কাজ শুরু করে দিন। মৌন থাকে খুবই সরল ও সহজ ব্যাপার এবং তা অসংখ্য লাভপ্রদান করে। যে অবস্থায় বা যে পরিবেশেই থাকুন না কেন, সেই অবস্থাতেই চব্বিশ ঘন্টা মৌন থাকার চেষ্টা করুন। জীবনের প্রকৃত পরিস্থিতি অনুভব করতে হলে চব্বিশ ঘন্টা মৌন থাকা খুবই জরুরি। চব্বিশ ঘন্টা মৌন থাকার পর আপনি নিজেই এর জাদু অনুভব করতে পারবেন। মৌন থাকার জন্য একা কোনো নিরালায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
আপনি বাড়িতে বা অফিসে নিজের দৈনন্দিন কাজের ভেতরেও মৌন থাকার কাজটা করে ফেলতে পারেন। অর্থাৎ মৌন থাকার সময় শুধু কথা বলবেন না বাকি সমস্ত কাজ করে যান। যারা বাড়িতে বা অফিসে মৌন থাকাটা অসম্ভব বলে মনে করছেন তারা শহরের বাইরে কোনো ধার্মিক স্থানে যেতে পারেন এবং মৌন থাকার চেষ্টা করতে পারেন। এই মৌনতার জাদু অনুভব করানোর জন্যই আজ বহু স্থানে মৌন থাকার জন্য শিবিরের আয়োজন করা হয়। জাতির জনক মহাত্ম গান্ধি মৌনতার জাদু দ্বারা এতটাই
প্রভাবিত ছিলেন যে তিনি প্রত্যেক সোমবার মৌন ব্রত রাখতেন। তাই তাঁর আশ্রমের লোকরা সোমবারকে মৌনবার বলত। আপনার যে দিনটা সুবিধা বলে মনে হবে সেই দিনটাই আপনি বেছে নিন, মাসে অন্তত একদিন মৌন থাকার চেষ্টা করুন। মৌনতার জাদুর ব্যাপারে আমার গভীর আস্থা ছিল কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো অনুভব ছিল না। প্রভুর কৃপায় 2002 সালের 2 শরা মে আমি পরথম বার মৌনব্রত গ্রহন করেছিলাম পরের দিন তা ভাঙি, তখন আমি এর জাদু অনুভব করতে পেরেছিলাম।
আমি মুখ বন্ধ করে বাড়ি ও অফিসের কাজ করেছিলাম। প্রথমে মনে হচ্ছিল যে কিভাবে এই চব্বিশ ঘন্টা কাটবে কিন্তু পরে কোনই অসুবিধা হয়নি, বরং এক সুন্দর আধ্যাত্মিক অনুভূতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তখন বুঝেছিলাম যে সত্যিই মৌনতার আর এক নাম জাদু। পরিবারের সদস্য বা কাছের বন্ধুরা সাহায্য করুক বা নাই করুক আপনি নিজে এই আনন্দ অনুভব করার জন্য অবশ্যই চব্বিশ ঘন্টা মৌন থাকুন। মৌন থাকার সময় আমি একটা চরম সত্য অনুভব করতে পেরেছিলাম যে- হে মানুষ তোমাকে ছাড়াও এই পৃথিবী চলবে। এই ভাবনার উদয় হলে যেকোনো ব্যক্তিই নিজের অহংকে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হবে। মৌনতা এক অসীম মানসিক শান্তি প্রদান করে, সম্পূর্ণ শরিরের উত্তেজনা কোথায় চলে যায়, কোনো চাপ ছাড়াই মানুষের শরির শিথিল হয়ে যায়, যার ফলে রাতের ঘুমটাও খুব ভালো হয়। আপনার শক্তিবৃদ্ধি পাবে, উৎসাহ বাড়বে, কাজ করতে থাকলেও আপনি ক্লান্তি বোধ করবেন না এবং আপনার কার্য ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। মৌন থাকার সময় বারংবার কাগজে লিখে নিজের বক্তব্য জানাবেব না। খুব প্রয়োজন অনুভব করলে তবেই কিছু লিখে নির্দেশ দিন। মৌন তাকার বারো ঘন্টা বাদে আপনি ভেতর থেকে একটা কোমলতা অনুভব করবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রফুল্লতা বোধ করবেন এবং মৌন থাকার ফলে আপনার সমস্ত শরির হাল্কা বলে বোধ হবে।
মৌন থাকতে পারলে শরির ও মস্তিষ্ক দুটিতেই আরাম বোধ করা যায়। আপনার রাগ হলেও তার গতি হ্রাস্ব পাবে। আপনি যদি কোনো ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকেন তাহলেও তাতেও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। মৌন থাকার সময় নিজের ব্যবসার ব্যাপারে অনেক বেশী চিন্তা করতে পারবেন অসম্পূর্ণ কাজের ব্যাপারে লেখা জোখা করার সুযোগ পাবেন। প্রতি দিন সকাল সন্ধ্যা মোন থেকে নিজের অন্তরাত্মার সাথে কথা বলুন। মৌন থাকার অনুভূতি লিখতে রাখতে ভুল করবেন না, এটা পরে আপনাকে সাহায্য করবে। মৌনব্রত পালনের আগে ও পরে যে মন্ত্র নিজের কাছে প্রিয় বলে মনে হয় তা পাঠ করতে ভুলবেন না। আমি মৌন থাকার সময় সবুজ ও হলুদ রং-এর দিব্য রোশনি দেখতে পাই। আমি বিশ্বাস করি যে মৌন থাকতে পারলে বহু অসুখের হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যায়, এই নিয়ে গবেষণাও ছলছে, পাঠকদের অনুরোধ করছি যে আপনারাও অবশ্যই মৌনতার জাদু অনুভব করে দেখুন।
বন্ধু! আজই জীবনে মৌ থাকার দরকার কতটা তা অনুভব করার চেষ্টা করুন। নিজের লক্ষ্যকে সম্পূর্ণতা প্রদান করার জন্য একাগ্রচিত্তে চব্বিশ ঘন্টা মৌন থাকার প্রক্রিয়া শুরু করুন। চব্বিশ ঘন্টা মৌন থাকতে পারলে নিজের থেকেই লক্ষ্য লেখার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবেন,
সঠিক জিনিসের চয়নের ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা হবে না। এরপর আপনাকে আর কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, নিজের লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারে নিজেকে সমর্পিত করতে আর কোন অসুবিধাই হবে না। সুতরাং মৌনের জাদুর উপর ভরসা রাখুন, তা বুঝুন, তা কার্যে পরিণত করে আনন্দ প্রাপ্তির চেষ্টা করুন। শুধু লক্ষ্যের ব্যাপারেই নয়, দৈনন্দিন জীবনের ব্যাপারেও চুপ থাকতে পারলে, আপনি সত্যিই লাভবান হবেন।
No comments:
Post a Comment