কোন বিষয়কে জীবনের লক্ষ্য করে তুলবেন
‘নিজের লক্ষ্যকে ভুলবেন না, তা না হলে ভালো মন্দ যা পাবেন তাই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’
-জর্জ বার্নার্ড শ

আপনি নিশ্চই বুঝেছেন যে, জীবনকে সুখ ও সম্পন্নে ভরিয়ে তোলার জন্য লক্ষ্য গড়ে তোলা খুবি জরুরি, কিন্তু এর পড় যে প্রশ্ন ওঠে তা হল কোন কোন ব্যাপারে লক্ষ্য গড়ে তোলতে হবে। সারা ভারত জুড়ে বহু ছোট বড় সেমিনারে আমি অংশ গ্রহন করি, প্রায় লক্ষ্যাধিক লোকের মুখে একই প্রশ্ন শুনতে পাই-তা হল কোন কোন বাপারে লক্ষ্য গড়ে তুলতে হবে। এই বিচিত্র ভারতবর্ষে বিচিত্র রকম মানুষ বাস করে,বিভিন্ন শহরে ভিন্ন বয়সের বিভিন্ন রকম লোক বাস করে, এমন কি তাদের খাদ্য গ্রহনের অভ্যাসও আলাদা, কিন্তু সকলের মোখে একি প্রশ্ন শোনা যায়, কি ব্যাপারে কি ভাবে নিজেদের লক্ষ্য গড়ে তুলবে। প্রিয় পাঠক! এখানে আপনাদের লক্ষ্য ও আপনাদের জীবন নিয়ে আলোচনা চলছে, তাই কোন একটা ব্যাপারে জীবনের লক্ষ্য গড়ে তুললে তাকে জীবনের লক্ষ্য বলা যায় না, সারা জীবনের লক্ষ্য তৈরী করতে হবে। জীবনের লক্ষ্য গড়ে তোলার সময় নিজের পড়াশোনার কথা ভাবুন, নিজের উন্নতির কথা ভাবুন, নিজের পরিবারের কথা ভাবুন। এছাড়া নিজের উপার্জনের কথাও ভাবতে হবে,সেই সমস্ত কাজের কথাও ভাবতে হবে যা আপনাকে
এই জীবনেই শেষ করতে হবে। যখন জীবনের সমস্ত বাপারে লক্ষ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন, সেই অনুসারে কাজ করতে শুরু করার পর, আপনি নিজেই সফলতার ঝলক দেখতে পাবেন। যখন জীবনের লক্ষ্যের প্রশ্ন আসে তখন সামাজিক দায়িত্বকে অস্বীকার করলে চলেনা, সেই ব্যাপারেও লক্ষ্য প্রস্তুত করতে হবে।যে কোনো একটা ব্যাপারে লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তাকে জীবনের লক্ষ্য বলা যায় না, বরং জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিচার করতে হবে, এবং আলাদা আলাদা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। সুতরাং সবার আগে আপনি নিজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে লক্ষ্য নির্ধারণের কাজটা সেরে ফেলুন।আমি বলতে চাইছি যে, সবার আগে পড়াশোনার ব্যাপারে লক্ষ্য গড়ে নিন, তারপর নিজের পরিবারের কথা ভাবুন,এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ পরিবার সম্পর্কে ভাবতে ভুলবেন না।এরপর আপনি কোন জীবিকায় যেতে চান এবং কত টাকা উপার্জন করতে চান সে ব্যাপারেও লক্ষ্য বানিয়ে নিন।
পড়াশোনা, পরিবার ও উপার্জন সংক্রান্ত লক্ষ্য নির্ধারণের পর সামাজিক,রাজনৈতিক এবং অন্যান্য বিষয় গুলির দিকে তাকাতে হবে, সেই ব্যাপারে জীবনের লক্ষ্য গড়ে তুলতে হবে এবং তা লিখে ফেলতে হবে। এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে যে, জীবনের সমস্ত ব্যাপারে লক্ষ্য লেখার পরই সর্বাঙ্গিন সফলতা পাওয়া সম্ভব। সুতরাং যখনই লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, তখন কোনো একটা বিন্দু নিয়েই পরে থাকবেন না, বরং জীবনের প্রতিটা ব্যাপারে লক্ষ্য নির্ধারণ করার চেষ্টা করুন।
ভারতের সংবিধানে যেমন প্রতিটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা আছে তেমনি লক্ষ্য নির্ধারণকেও আপনার জীবনের সংবিধান করে তুলতে হবে।সফল জীবন যাপনের জন্য সমস্ত ব্যাপারে লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা খুবই জরুরি। তবেই তা আপনার জীবনের সংবিধান হয়ে উঠবে আর জীবনের প্রতিটা মোড়ে এটাই আপনাকে পরামর্শ দেবে, সাহায্য করবে,প্রেরণা দেবে এবং কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করবে। এ প্রসঙ্গে আমার একটা সত্যি ঘটনা মনে পড়ছে, ফরুখাবাদের একটা মেয়ে আঠার বছর বয়সে গ্রেজুয়েশান করে ছিল আর তারপর তার বিয়ে হয়ে যায়। পাঠক ভাবতে পারে এটা তো খুব ই সাধারণ ঘটনা, এতে নতুনত্বের কি আছে। কিন্তু উল্লেখ যোগ্য বিষয় হল, বিয়ের পর মেয়েটি আমেরিকায় চলে গেছিল। আমেরিকার ভাষা এবং আদপ-কায়দা আলাদা হওয়ার জন্য সেখানে গিয়ে মেয়েটি খুব সমস্যায় পড়েছিল, তার উপর নতুন বিয়ে।
তার
স্বামী তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, তুমি কি করতে চাও?সে জানিয়েছিল জে
সে লেখাপড়া ছাড়া আর কিছু করতে
চায় না। তার স্বামী তাতে রাজি হয়ে যায় এবং বলে যে এতে তার
কোনো সমস্যা নেই। মেয়েটি যদি ভারতেই থাকত তবে কোনো না কোনো কলেজ
বা ইউনিভার্সিটি থেকে এম.এ, এম.কম বা এম.বি.এ করার
সুযোগ পেত। কিন্তু সে ছিল আমেরিকায়
যার ফলে তাকে সেখানে পড়াশোনা করতে হত। স্বামীর উৎসাহে সে আমেরিকার এক
ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে যায়।
সেখানকার কয়েক জন মহিলার সাথে কথা বলার পর তাদের মনে হয়েছিল যে, তার বয়স কম যার ফলে সে সেখানকার পড়াশোনা আয়ত্ত করতে আয়ত্ত করতে পারবে না। তাই তারা তাকে নীচু ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু সে কিছুতেই নীচু ক্লাসে ভর্তি হতে চাই নি কারণ সে ভারত থেকে গ্রাজুয়েশান করে গেছিল,তাই সে উঁচু ক্লাসে ভর্তি হওয়ার দাবি করেছিল।
আসলে, আঠারো বছর বয়সে আমেরিকাতে কেউই গ্রেজুয়েশান করতে পারেনা। এই বয়সের বিদ্যার্থীরা কমপক্ষে এর থেকে দুই ক্লাস নিচুতে পড়ে। সুতরাং ইউনিভার্সিটির লোকেরাও ঠিক কথাই বলছিল, কিন্তু মেয়েটিও নিজের জেদ আঁকড়ে বসেছিল, সে কিছুতেই নিচু ক্লাসে ভর্তি হতে চাইনি, শেষ পর্যন্ত ইউনিভার্সিটির লোকেরা হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়, তারা তাকে প্রথমে দুই দিন উঁচু ক্লাসে ক্লাস করে দেখতে বলে (সে যে ক্লাসে ভর্তি হতে চেয়েছিল)।
এ কথা শুনে সে খুবই খুশী হয়েছিল, তার মনে হচ্ছিল সে ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়ে যাবে। সে নতুন ক্লাসে যায় ও দুই দিন সব কটা ক্লাস করে কিন্তু তারপর সন্ধ্যাবেলায় তার প্রচন্ড কান্না পায়, কারণ সে ভারত থেকে গ্রেজুয়েশান করে যাওয়া সত্ত্বেও সেখানকার একটা অক্ষরও বুঝতে পারেনি। এমন অবস্থায় সে কি করবে এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছিল, কিন্তু সে নিজের জীবনের লক্ষ্য তৈরি করে ফেলেছিল, আমেরিকাতে থেকে উঁচু ক্লাসে পড়াই তার জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছিল। সে সবার প্রথমে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করে তারপর তা পূরণের জন্য উঠে পড়ে লাগে। সে আমেরিকার লোকেদের ইংরাজি একদম বুঝতে পারত না। পরের দিন
থেকে সে টি.ভি. দেখতে শুরু করে।সে এক দুই ঘন্টা টি.ভি. দেখত না, দিনে আট ঘন্টা টি.ভি. দেখে সেখানকার ইংরাজি শেখার চেষ্টা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সে আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা প্রাপ্ত করে এবং সেখান থেকে ভালো মার্কস সহ বেশ কিছু ডিগ্রীও অর্জন করে। 2011 সালের জানুয়ারিতে এই মহিলার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল আর সৌভাগ্য বশত তার মুখ থেকেই আমি সব শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। এখানেই এর সমাপ্তি নয়।
ভারত থেকে যাওয়া এই মেয়েটি যে আমেরিকার ইংরাজি বুঝতে পারত না, সে নিজের চেষ্টার ফলে আজ ইউনিভার্সিটি অফ হসটনের চান্সেলর এবং প্রেসিডেন্ট। তার নাম রেণু খটোর। আশা করি এই সত্যি ঘটনা জানতে পেরে আমার পাঠকরা খুবই খুশী হয়েছে, যদি আপনিও জীবনের উদ্দেশ্য লিখে ফেলেন এবং তা প্রাপ্ত করার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন তা হলে আপনার জীবনের উদ্দেশ্যও নিশ্চই পূরণ হবে। ভারতে এক মহিলা এই বিশ্ববিখ্যাত ইউনিভার্সিটির চান্সেলর, ভারতে কাছে সত্যিই তা গর্ভের বিষয়। আজ ভারতের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী যে কমিটির গঠন করেছেন তাতে তাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। আজ প্রাধানমন্ত্রী ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তার সাথে আলোচনা করেন।
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের উপরেই সব খেলা নির্ভর করছে। সুতরাং জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তে লক্ষ্য নির্ধারণের ব্যাপারে সজাগ থাকুন, তবেই আপনার জীবন সফল হতে পারবে। কিছু দিন আগে হায়দ্রাবাদে বসবাসকারী এক ব্যক্তির সাথে আমার আলাপ হয়। কয়েক বছর আগে সে ঠিক করেছিল যে, সে এক কোটি টাকা উপার্জন করবে। সে একেবারেই সাধারণ পরিবারের মানুষ ছিল, একটা ছোটোখাট ব্যবসা করত। সে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিল। সে নিজের লক্ষ্যের কথা কাউকে বললে, হয়তো সবাই তার কথা শুনে হাসত, কিন্তু সে নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল। কোটিপতি হওয়াই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। খুব কম সময়ের মধ্যেই সে নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল।
তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তার সঙ্গীরা বলেছিল যে এটা খুবই সত্যি যে তার অবস্থা অতিব সঙ্গিন ছিল। লক্ষ্য নির্ধারণ এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে আজ সে কোটি টাকার মালিক। আজ সে হায়দ্রাবাদেনিজের বাড়িতে বাস করে। তার সাথে দেখা হওয়ার পর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তুমি কি কর? সে বলেছিল, ভিখারিদের সাথে কাজ করি। কথাটা শুনে আমি একটু চমকে গেছিলাম। ভেবেছিলাম ভিখারিদের সর্দার নাকি, কিন্তু তাকে দেখে আমার তা মনে হচ্ছিল না।
আমি নিজের আগ্রহ চেপে রাখতে পারিনি, ও ভিখারিদের সাথে কি করে খুবই জানতে ইচ্ছা করছিল। আমি প্রশ্ন করার পর এই যুবক নিজের জীবনের কথা বলতে শুরু করে। প্রচুর অর্থ উপার্জনই ছিল তার জীবনের স্বপ্ন, সে এই অনুসারে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে শুরু করে। নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য সে হাদ্রাবাদের ভিখারিদের প্রেরণা দিতে শুরু করে, তাদের ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কোনো কাজ করার জন্য প্রেরণা দেয়। সে এই ভিখারিদের গাড়ী পরিস্কার করার কাপড় বা ডাস্টার বিক্রী করার পরামর্শ দেয়, আজ হায়দ্রাবাদে প্রায় পাঁচশো জন ভিক্ষাবৃত্তি ত্যাগ করে তার দেখানো পথে চলছে।আর সে এই ব্যক্তিদের সঙ্গে ব্যবসা করে আজ সৎ পথে প্রচুর টাকা উপার্জন করছে।
এই যুবকের নাম নরেশ ভূতরা এবং সে হায়দ্রাবাদে বসবাস করে। এই সত্য ঘটনা গুলি বলার উদ্দেশ্য হল পাঠকদের এটা বোঝানো যে জীবনের প্রতিটা ধাপে লক্ষ্য নির্ধারণ করতেই হয়৷ লক্ষ্য বানাতে পারলে অবশ্যই সফল হবেন। এমন বিচারধারা অবশ্যই আপনাকে সফলতা দেবে, কিন্তু সবার প্রথমে আপনাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতেই হবে।
লক্ষ্য প্রস্তুতির ব্যাপারে একটা কথা বলতেই হয় যে, যদি সামাজিক, সংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়ে কোনো স্বপ্ন থেকে থাকে তা হলে তাও পূরণ করার চেষ্টা করুন। এই ব্যাপারের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেন মাদার টেরেজা। গরিব ও অসহায় ব্যক্তিদের সাহায্য করাই ছিল তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য, এই লক্ষ্যের জন্যই আজ সারা বিশ্বের লোক তাঁকে চেনে, এই কারণে তিনি নবেল পুরস্কার পর্যন্ত পেয়েছেন। এক ডাক্তারের এমনই এক লক্ষ্য ছিল। উনি পাকিস্থানে বাস করতেন, তিনি ঠিক করেছিলেন যে, পাকিস্থান ও ভারতে খুব বড় ও ভালো হাসপাতাল বানাবেন, তিনি মন প্রান দিয়ে এই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করেছিলেন যার ফলে ভারত ও পাকিস্থানে খুব ভালো হাসপাতালও গড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। এই ব্যক্তির নামে দিল্লীতে বিরাট হাসপাতাল আছে, যা আজও গঙ্গারাম হাসপাতাল নামে পরিচিত।
দিল্লীর পার্শ্ববর্তী স্থান গুড়গাঁওয়ের এক ব্যক্তি ঠিক করেছিলেন যে, আমোদ প্রমোদের জন্য এমন এক স্থান বানাবেন যাতে সমস্ত লোক সে দিকে আকর্ষিত হয়। ভারতে বিভিন্ন স্থানে আমোদ প্রমোদের জন্য এমন বহু স্থান থাকলেও তিনি একেবারেই নতুন কিছু গড়ার কথা ভেবেছিলেন। তারপর এই ব্যক্তি কিছু সহযোগিদের সঙ্গে নিয়ে এই স্থ গড়ার কাজ শুরু করেন যার নাম তিনি দিয়েছিলেন কিঙ্গডম অফ ড্রীমস। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হল এই স্থানে যাওয়ার জন্য ব্যক্তি পিছু 500 টাকা থেকে 750 টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তার পাশেই আর একটা আমোদ প্রমোদের ক্ষেত্র আছে সেখানে এক বিরাট অনুষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়, সেখানে ব্যক্তি পিছু খরচ হয় কমপক্ষে 750 টাকা থেকে 6000 টাকা। এটা এতই ব্য সাপেক্ষ যে প্রথমে শুনার পর লোকেদের মনে হয়েছিল যে এই স্থান চলবেনা। উন্নতিই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। সবচেয়ে বড় কথা আজ এই ক্ষেত্ৰ উন্নতির চরম শিখরে বিরাজ করছে।
লন্ডনে এক আমোদ প্রমোদ ক্ষেত্র আছে যা লন্ডন আই নামে পরিচিত সেই অনুসারে দিল্লীতেও দিল্লী আই নামে এক আমোদ প্রমোদের ক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়েছে। এই ব্যক্তির দৃষ্টি ভঙ্গীর জন্যই এই স্বপ্ন বাস্তবে পরিনত হতে পেরেছে, তিনি নিজের লক্ষ্য লিখতে ভুল করেন নি। সুতরাং আপনিও জীবনের সমস্ত ব্যাপারেই লক্ষ্য গড়ে তুলুন তবেই আপনি বাস্তবিক সফলতা লাভ করবেন। নিজের জীবনকে সুবর্ণময় করে তোলার জন্য আজই জীবনের লক্ষ্য লিখে ফেলুন, তাহলে আপনার জীবন অবশ্যই আনন্দের সাথে অতিবাহিত হবে, আপনি সন্তুষ্টিও লাভ করবেন।
একটা কথা মাথায় রাখবেন এর জন্য ভাগ্যের দরকার হয় না। আপনার লক্ষ্য যদি মজবুত হয়, নিজের লক্ষ্য গড়ে তোলার পর যদি তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন তাহলে আপনি সফল হবেনই। আমি পাঠকদের একটা কথাই বলতে চাই যে, যখন লক্ষ্যের কথা বলা হচ্ছে তা মানে জীবনের সমস্ত লক্ষ্যের কথাই বলা হচ্ছে। সুতরাং জীবনের প্রতিটা মোড়ে আপনার জীবনের লক্ষ্য কি তা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করার পরই আপনার জীবন সফলতার দিকে অগ্রসর হবে। স্বামী প্রভুপদ মহাশয়ের আলোচনায় আসা যাক। অনেক বয়সে নিজের প্রভুর আজ্ঞা পালনের জন্য তাঁর জীবনের লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল যে সারা বিশ্ব জুড়ে তিনি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মাহাত্ব প্রচার
করবেন। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে মন প্রান ঢেলে তিনি এই কাজ শুরু করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের লক্ষ্য পূরণেও সক্ষম হন। এই ভাবে তিনি সারা বিশ্ব জুড়ে কৃষ্ণের মন্দির স্থাপন করেছিলেন এর জন্য একটা সংস্থাও গড়ে তুলেছিলেন যা আজ ইস্কন নামে পরিচিত। বিবেকানান্দ ও প্রভু রামকৃষ্ণ সম্পর্কেও এই একই কথা বলা যায়। আধ্যাত্মিকতার প্রচার প্রসারই ছিল তাঁদের জীবনের লক্ষ্য। তাঁরা এই লক্ষ্য পূরণেও সক্ষম হয়েছিলেন। যখন জীবনের লক্ষ্যের কথা আসে তখন এটা দেখা যায় যে এমন অনেকেই আছে যারা জীবনের লক্ষ্য বানাতে চাইলেও তা পূরণ করতে পারেনা, এর জন্য তারা বহু অজুহাতও দেখায় কারণ তারা তাদের মনকে বোঝাতে চায় যে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণেই তারা সফলতা লাভ করতে পারেনি। লক্ষ্য গড়ে তোলার পর বহু প্রতিকূলতা ও বাধা আসতেই পারে, তার জন্য আপনার ভিতরে বিশ্বাস থাকতে হবে, লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবেই তবেই আপনার লক্ষ্য পূরণ হওয়া সম্ভব।
আজ আমার বাবার কথা খুবই মনে পরছে।
তিনি দরিদ্রতার মধ্যেই মানুষ হয়েছেন, পড়াশোনা করার মতন পরিবেশও ছিলনা, তা সত্বেও তিনি নিজের জীবনের লক্ষ্য বানিয়েছিলেন এবং সর্বদাই প্রথম স্থান অধিকার করতেন। এই আকাঙ্খার জন্যই তিনি এম.কম. ও এল.এল.বিতেও সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অদিকার করতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ শুধু তাই নয় আই.আর.এস. এর পরীক্ষাতেও সারা ভারতের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতে পেরেছিলেন। পাঠকদের লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারেও তিনি আমাকে যথেষ্ট প্রেরণা প্রদান করেছিলেন।কয়েক বছর আগে আমার বাবা শ্রী রামনিবাস লিখোটিয়া ঠিক করেছিলেন যে তিনি লক্ষ্যাধিক লোকের সামনে নিরামিষ খাদ্য গ্রহনের উপযোগিতার কথা প্রচার করবেন, তিনি নিজের লক্ষ্য পূরণের কাজে লেগেও পরেন। নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য তিনি বহু স্কুল, কলেজ এবং সংস্থাতে গিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে নিরামিষ খাদ্যের উপযোগিতা সম্পর্কে ব্যাখা দিয়েছেন এর প্রচার প্রসারের ব্যাপারে তাঁর যথেষ্ট অবদান আছে। আমার বাবা আরো একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন, আটকর আইনের উপরে তিনিই সবচেয়ে বেশী বি লিখবেন। লেখক হওয়ার মতন কোনো পরিবেশই বাড়িতে ছিল
না তা সত্বেও এটা ছিল তাঁর লক্ষ্য যা তিনি পূরণ করেছিলেন। তাঁর চিন্তা ভাবনা এবং তাঁর সমর্পনই তাঁকে এই কাজ পূরণ করতে সাহায্য করেছিল।
জীবনের প্রতিটা মোড়ে যদি লক্ষ্য প্রস্তুত করে নেন তাহলে অবশ্যই আপনি সফলতা লাভ করবেন। কিন্তু এই সফলতা বিভিন্ন স্থানে বসে আছে, এখন প্রশ্ন হল কখন কোন সফলতাটা লাভ করতে হবে। বহু সফলতা অর্জনই হয়ে উঠুক আপনার জীবনের উদ্দেশ্য, সেটাই জীবনের লক্ষ্য নির্ধারন করে দেবে।
এই মুহূর্তে আমার প্রায় 35-40 বছরের পুরানো কথা মনে পরছে,তখন আমরা কলকাতার একটা বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, যার ভাড়া ছিল মাসে 600 টাকা। সেই সময় আমার মা শ্রীমতি আশা রাণী লাখোটিয়া নিজের জীবনের উদ্দেশ্য স্থির করেছিলেন, তিনি ঠিক করেছিলেন যে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়িতে যাবেন। তাঁর উদ্দেশ্য সৎ এবং ভালো ছিল ঠিকই কিন্তু তা পূরণের ব্যাপারে প্রচুর সমস্যা ছিল। কত পয়সার ব্যাপার কোথা থেকে এত পয়সা আসবে, কি ভাবে নিজেদের বাড়ি তৈরি হবে, তখন এই সমস্ত প্রশ্নই মাথায় ছুটে বেরাচ্ছিল। কিন্তু অবশেষে 1975 সালে আমার মায়ের ইচ্ছা পূরণ হয়,আমরা নিজেদের বাড়িতে প্রবেশ করি। আজ থেকে প্রায় 50 বছর আগে আমার মা আরো একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজমিরে আমাদের পূর্বপুরুষদের একটা ছোট্ট বাড়ি ছিল কোনো কারণ বশত তা বিক্রী হয়ে গেছিল। সেই সময় মার লক্ষ্য ছিল আজমিরে আবার তবেই যাবেন যবে সেখানে নিজের বাড়ি হবে।
তাঁর সেই লক্ষ্যও পূরণ হয়েছিল, আজমিরে আশা নিবাস তৈরি হয়েছিল। এটা প্রায় আজ থেকে 45 বছর আগের কথা, সে সময় আমরা কলকাতাতেই থাকতাম। সেই সময় আমি অনেক ছোটো ছিলাম আর আমার বাবা নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। 1965 সালে এই বাড়ি তৈরির জন্য আমার মা প্রচুর পরিশ্রম করেছিলেন। আমার বাড়ির পরিবেশই বোধ হয় লক্ষ্য প্রাপ্তির ব্যাপারে আমাকে এতটা সজাগ করে তুলেছে। তাই আজ আমি পাঠকদের লক্ষ্যের উপযোগিতা সম্পর্কে বলার ব্যাপারে এতটা আগ্রহী।
বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় গায়ক মহম্মদ রফিই হোক বা লতা মঙ্গেসকার,তাঁরও নিজেদের জীবনের লক্ষ্য গড়ে তুলেছিলেন এবং তা সম্পূর্ণ করতেও সক্ষম হয়েছেন। তেমনি আজকের দিনের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এ.আর রহমনও নিজের জীবনের লক্ষ্য তৈরি করেছিলেন, তিনি সারা বিশ্ব জুড়ে নিজের সঙ্গীতের সুর ছেয়ে দিতে চেয়েছিলেন যাতে তিনি সফলও হয়েছেন। আজ সারা পৃথিবী তাঁকে তাঁর গানের জন্য সম্মান করে। প্রত্যেককেই জীবনের প্রতিটা পর্বে লক্ষ্য বানিয়ে নেওয়া উচিত। বর্তমানে ভারতের এক প্রতিষ্ঠিত কম্পানির রিটাএরমেন্টপরিকল্পনার ব্যাপারে কাজ করি। এই কম্পানি থেকে যারা শীঘ্রই অবসর গ্রহন করতে চলেছে এমন উচ্চ বেতনভোগী কর্মচারীদের যখন আমি অনুরোধের সুরে বলি যে, কমপক্ষে এখন নিজেদের জীবন নিয়ে পরওয়া করুন এবং সেই অনুসারে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন তখন তারা আমার কথা শুনে একটু অবাক হয়।তারা ভাবে অবসর গ্রহনের সময় আবার কি পরিকল্পনা করবে। প্রায় সন্ধ্যার মুখে আমাদের সেমিনার শেষ হয়, সেই সময় প্রায় সকলেই আমার সাথে একমত হয়ে যায় যে, জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে অবশ্যই তাদের লক্ষ্য বানানো উচিত।
বয়স যাই হোক না কেন তার পরওয়া না করে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের কথা ভাবুন এবং সেই অনুসারে জীবন এগিয়ে নিয়ে যান। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী আব্দুল কালামের জীবনের একটা ঘটনা এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে। তিনি যখন হায়দ্রাবাদে ছিলেন সেই সময় হঠাৎই একদিন তাঁর মনে হয়েছিল যে, যারা পায়ের সমস্যার জন্য লোহার তৈরি তিন কিলো ওজনের যন্ত্র নিয়ে চলে তাদের জন্য তিনি কিছু করার কথা ভেবেছিলেন। আসলে তিনি সেই অসহাট বাচ্চাদের কথা ভেবেছিলেন পায়ের সমস্যার জন্য যারা হাঁটতে পারেনা উপরন্তু তাদের পায়ে প্রায় তিন কিলো ওজনের যন্ত্র বেঁধে দেওয়া হয়। এই বাচ্চা এবং তাদের বাবা-মাদের কথা ভেবে আব্দুল কালামের মন কেঁদে উঠেছিল। তিনি এই ব্যাপারে কিছু করার জন্য সংকল্প নিয়েছিলেন। তিনি এই বাচ্চাদের পায়ে তিন কিলো ওজনের পরিবর্তে মাত্র তিনশো গ্রাম ওজনের যন্ত্র পরিয়ে নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। একবার কল্পনা করে দেখুন তো যখন এই কাজ সম্পন্ন হয়েছিল তখন মাননিয় আব্দুল কালাম মহাশয় কতটা আনন্দ পেয়েছিলেন। সুতরাং আপনিও আজই
জীবনের লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হন এবং জীবনের আনন্ন উপভোগ করার চেষ্টা করুন। যদি এডিসনের জীবনী পড়েন তাহলে দেখতে পাবেন যে তিনি একটাই লক্ষ্যের পিছনে ছুটে গেছেন বারংবার অসফল হওয়া সত্বেও তিনি পরিক্ষা চালিয়ে গেছেন আর শেষ পর্যন্ত এক অভূত পূর্ব প্রগতি লাভ করেছেন। যখন আপনি জীবনের লক্ষ্য পূরণের ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর হবেন তখন বহু বার পা পিছলাতে পারে, কিন্তু আপনি নিজের লক্ষ্য পূরণের কথা ছাড়া আর কিছু ভাববেন না। তা হলে অবশ্যই আপনি লাভবান হবেন।
প্রিয় বন্ধু! এই সম্পূর্ণ বই জুড়ে শুধু আপনার লক্ষ্য নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। আমি চাই যে আপনি নিজের সম্পূর্ণ জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভাবুন, তা নিয়ে বিচার করুন এবং কাঠামো গড়ে তুলুন।
কিন্তু
অনেক সময় সম্পূর্ণ জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভাবার পরিবর্তে তৎকালিন লক্ষ্যের দিকে নজর দিতে হয়৷ সেই সময় এই একটা লক্ষ্যের
ব্যাপারেই আমাদের মননিবেশ করা উচিত। আমরা চাই বা নাই চাই
অনেক সময়তেই জীবনের তৎকালিন লক্ষ্যের ব্যাপারে ধ্যান দিতেই হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, মনে করুন রাস্তায় কোনো দূর্ঘটনা ঘটেছে, সেই সময় আহত ব্যক্তিকে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই আপনার প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠা উচিত।
আপনি সেই অনুসারেই কাজ করবেন। তেমনি যদি কোথাও আগুন লেগে থাকে তাহলে সবার আগে আপনাকে ভাবতে হবে যে এই আগুন কিভাবে নেভানো সম্ভব। তেমনি বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে তাকে সুস্থ করাই আপনার প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠা উচিত। সুতরাং অনেক সময়তেই তৎকালিন লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখেই জীবনের পথে এগাতে হয়। সুতরাং একটা কথা মাথায় রাখবেন যে, যখন লক্ষ্যের কথা বলা হবে তখন শুধুমাত্র লক্ষ্যের দিকেই ধ্যান দিন, অবশ্যিক কোনো ঘটনা ঘটে গেলে সেই সময় তা নিয়ে চিন্তা করুন, বিচার করুন ও তা নিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করুন।
No comments:
Post a Comment